লালজল দেবী পাহাড় ও লালজল গুহা

পাহাড়টি লালজল দেবী পাহাড় নামে পরিচিত। আর লালজল হল এই গ্রামটির নাম। লালজল – এই অদ্ভুত নামের পিছনে আসল কারণ হল এখানকার ঝরনার জলের সামান্য লালছে আভা।যার প্রধান কারণ হল জলে তামা ও লোহার মিলিত উপস্থিতি, যদিও এই জল কিন্তু বেশ সুস্বাদু। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, লাল রঙের এই জলের কারণেই গ্রামটির নাম লালজল। যদিও জলের রং এখন আর লাল নেই!

বেলপাহাড়ি থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পিচ রাস্তা ধরে ১৯ কিমি অথবা ঝিলিমিলি থেকে দক্ষিণে ১০ কিমি গেলে পড়ে লালজল মোড়। সেখান থেকে ডান দিকে লাল পাথুরে রাস্তায় পাহাড়ি উতরাই পেরিয়ে ২ কিমি মতো এগোলেই লালজল গ্রাম। বেলপাহাড়ির এই গ্রাম আজও বাঁচিয়ে রেখেছে আদিম মানব গুহা-সহ বহু প্রাচীন নিদর্শনের বাস্তব রূপকে। প্রত্ন গবেষকদের মতানুসারে,প্রায় হাজার হাজার বছর আগে লালজল ছিল প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক ক্ষেত্র। চার দিকে পাহাড়ের মাঝে এই গ্রাম। গ্রামের পশ্চিমে দেওপাহাড়ে রয়েছে আদিম মানবের গুহা। দক্ষিণ-পূর্ব অংশ জুড়ে সিংলহর পাহাড়ের শ্রেণি। আর গ্রামের উত্তরে রয়েছে রানিপাহাড়। প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষী এমন একটি জায়গা অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে। অপূর্ব নৈসর্গিক এলাকাটি অনায়াসেই হতে পারে অসাধারণ এক পর্যটন কেন্দ্র। দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসে বেলপাহাড়ির এই লালজল দেবী পাহাড়ের নৈসর্গিক পরিবেশ উপভোগ করতে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাস্তার এবং গ্রামের কোনো উন্নতি ঘটল না!

পাহাড়ে উঠতে হলে বড় বড় পাথরের খাঁজ ধরে সতর্ক ভাবে উঠতে হয়। গুহার মুখ এতটাই অপরিসর যে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হবে। গুহার ভিতরের দেওয়ালে খোদাই করা আছে নানা ধরনের ছবি। একটি ছবিতে একাধিক রঙের ব্যবহার রয়েছে। যদিও সেগুলি গুহার ভিতরে না ঢুকলে দেখা সম্ভব নয়। গুহার দেওয়ালে খোদাই করা সেই সব প্রাচীন মানুষদের নানা শৈল্পিক উদাহরণ। যা এখনও আপনাকে বিস্মিত করতে বাধ্য।

জনশ্রুতি অনুসারে, এক সময় এই গুহার বিভিন্ন স্তর থেকে আদিপ্রস্তর, মধ্যপ্রস্তর নব্যপ্রস্তর, তাম্রপ্রস্তর ও লৌহপ্রস্তর যুগের নিদর্শন মিলেছিল। এর মধ্যে রয়েছে পাথরের লাঙল, নীল গাইয়ের হাড়ের ফসিল,  পাথরের তিরের ফলা,  পাথরের ত্রিভুজাকৃতি চপার,  তামার কুঠার ইত্যাদি। নীলগাই সহ আরও কিছু প্রাণীর জীবাশ্মও মিলেছে এখানে। ১৯৬২ সালে রামস্বরূপ নামে এক সন্ন্যাসী লালজলে এসে ওই গুহায় আশ্রয় নেন। সাধুর পোষ্য ছিল একটি চিতাবাঘ।ওই চিতাবাঘের সঙ্গেই গুহায় বাস করতেন সন্ন্যাসী রামস্বরূপ। ১৯৯৫ সালে রামস্বরূপ মারা গেলে দেওপাহাড়ের কোলেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। রাম স্বরূপের উদ্যোগেই লালজল গ্রামে ১৯৮৩ সালে বাসন্তী পুজোর প্রচলন হয়। এখনও চল রয়েছে সেই পুজোর। পাহাড়ের ওপর গুহা। তার একধাপ নিচে দুর্গা মন্দির। আর পাহাড়ের কোলে সাধুসন্তদের জন্য আশ্রম গড়ে তোলা হয়েছিল। সেখানেই হয় নিত্য পুজা। সে সময়ে পাঁচ দিনের মেলা বসে লালজলে। ঝাড়গ্রামের এই প্রত্যন্ত গ্রাম লালজল, চল্লিশ পঞ্চাশটি পরিবার নিয়ে গঠিত। প্রধানত ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলি। কিন্তু হায়, প্রশাসনিক উদাসীনতায় ও অবহেলায় লালজলের প্রাচীন নিদর্শনগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে।

 বেলপাহাড়িতে যে এমন একটি আদিম সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে, সেটা অনেকের কাছেই অজানা। গুহার ভিতর পরিষ্কার করে এখানে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এলাকাবাসীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

Laljal Devi Hill and Laljal Cave

The hill is known as Laljal Devi Hill. And Laljal is the name of this village. Laljal – The real reason behind this strange name is the slightly reddish tinge of the spring water, which is mainly due to the presence of copper and iron in the water, although the water is quite tasty. According to local residents, the village is named Laljal because of this red colored water. Although the color of the water is no longer red!

19 km along the pitch road from Belpahari to Banspahari or 10 km from Jhilimili to the south, you will find Laljal junction. From there, on the right side, cross the hilly slope on the red stone road and proceed for about 2 km to Laljal village. This village in Belpahari still survives to this day many ancient artifacts including primitive man cave. According to archeologists, about thousands of years ago Laljal was a very rich area of ​​ancient civilization and culture. This village is surrounded by mountains. To the west of the village there is a cave of primitive man in Deopahar. The Singlahar hill range covers the southeastern part. And to the north of the village is Ranipahar. A place that bears witness to an ancient civilization remains neglected. The beautiful scenic area can easily become a wonderful tourist destination. Many people come from far and wide to enjoy the natural environment of this Laljal Devi hill of Belpahari, but till now there is no improvement in roads and villages! 

If you want to climb the mountain, you have to climb carefully on the grooves of big rocks. The mouth of the cave is so narrow that one has to crawl in. Various pictures are carved on the inner walls of the cave. A picture has more than one color usage. Although they cannot be seen without entering the cave. Various artistic examples of those ancient people carved on the cave walls. Which is still bound to surprise you. 

According to legend, at one time there were traces of Paleolithic, Mesolithic, Neolithic, Copperstone and Ironstone ages found in different layers of this cave. These include stone ploughshares, blue cow bone fossils, stone arrowheads, triangular stone choppers, copper axes etc. Fossils of some other animals including Nilgai have also been found here. In 1962, a monk named Ramswarup came to Laljal and took shelter in that cave. The saint's pet was a leopard. The monk Ramswarup lived in the cave with that leopard. When Ramswaroop died in 1995, he was buried at the foot of Deopahar. Basanti Puja was introduced in Laljal village in 1983 at the initiative of Ram Swarup. The puja is still going on. Cave on the mountain. A step below it is the Durga temple. And an ashram was built for saints on the lap of the hill. Daily worship is done there. At that time a five-day fair was held at Laljal. Laljal, a remote village in Jhargram, consists of forty to fifty families. People mainly depend on paddy cultivation. But alas, due to administrative indifference and neglect, the ancient monuments of Laljal are getting lost.

It is unknown to many that there are traces of such a primitive civilization in Belpahari. If the inside of the cave is cleaned and an eco-friendly tourist center is built here, there is a chance to improve the socio-economic condition of the local people.